ইলিশ মাছ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

ইলিশ মাছ, বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের জনপ্রিয় একটি মাছ।ইলিশ মাছ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। এটি শুধুমাত্র সুস্বাদু নয়, বরং এর পুষ্টিগুণও অসাধারণ। তবে, এর কিছু সম্ভাব্য অপকারিতাও রয়েছে। এখানে আমরা ইলিশ মাছের উপকারিতা এবং অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

ইলিশ মাছের উপকারিতা

ইলিশ মাছ পুষ্টি উপাদানে ভরপুর

ইলিশ মাছ প্রোটিনের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। এটি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সকল অ্যামিনো অ্যাসিড প্রদান করে। এক কাপ ইলিশ মাছের মধ্যে প্রায় ২২ গ্রাম প্রোটিন থাকে, যা পেশী বৃদ্ধিতে এবং শরীরের সার্বিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

এছাড়াও, এতে রয়েছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি১২, এবং মিনারেলস যেমন ক্যালসিয়াম ও সেলেনিয়াম। এই পুষ্টিগুণগুলি আমাদের হাড়ের স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, এবং সারা শরীরের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে।

 

হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

ইলিশ মাছের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এতে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এই উপাদানটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদপিণ্ডের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।

 

 মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়

ইলিশ মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করতে পারে।

 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে

ইলিশ মাছের কিছু উপাদান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায্য করে। ইলিশ মাছের ফ্যাটি অ্যাসিড ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায় যা ডায়াবেটিসের রিস্ক কমাতে সাহায্য করে। এটি রক্তের গ্লুকোজ স্তর স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করতে পারে।

আরও পড়ুন > সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা 

ইলিশ মাছের অপকারিতা

ইলিশ মাছের নানা ধরনের উপকারিতার পাশাপাশি এর কিছু অপকারিতাও রয়েচে।যেমন:

 

ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে

ইলিশ মাছের পুষ্টিগুন নির্ভর করে তার পরিচ্ছন্নতা ও সঠিক সংরক্ষণের উপরে।। যদি মাছটি ঠিকভাবে পরিষ্কার না করা হয়, তবে এটি বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। বাজারে বিক্রি হওয়া মাছগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার করা না হলে তা হজমের সমস্যা ও বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

 

শরীরে চর্বি বেড়ে যেতে পারে

ইলিশ মাছের চর্বি, বিশেষ করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অতিরিক্ত পরিমাণ শরীরের চর্বির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। অতিরিক্ত চর্বি উচ্চ কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, ইলিশ মাছ পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

হজমে সমস্যা করে

কাঁচা বা অপর্যাপ্তভাবে রান্না করা মাছ থেকে স্যালমোনেলা, ভিব্রিও বা অন্যান্য ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এই ধরনের সংক্রমণ হজমের সমস্যা, বমি, এবং ডায়রিয়া সৃষ্টি করে। তাই মাছ সঠিকভাবে রান্না করা উচিত এবং কাঁচা মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

আরও পড়ুন >সকালে খেজুর খাওয়ার ১০ উপকারিতা

FAQ

১. ইলিশ মাছ খাওয়ার প্রধান স্বাস্থ্য উপকারিতা কী?

ইলিশ মাছ প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ডি এবং নানা ধরনের খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ। এটি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায্য করে।

 

২. ইলিশ মাছের মধ্যে ক্যালোরির পরিমাণ কত?

ইলিশ মাছের ক্যালোরি পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম ইলিশে প্রায় ২০০-২৫০ ক্যালোরি থাকে, যা অন্যান্য মাছের তুলনায় কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে এতে স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং প্রোটিন রয়েছে।

 

৩. ইলিশ মাছ খেলে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে কি?

ইলিশ মাছ সাধারণত নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে উচ্চ ক্যালোরি এর কারনে ওজন বেড়ে যেতে পারে । এছাড়াও, সমুদ্রের মাছের মধ্যে কখনো কখনো ভারী ধাতুর উপস্থিতি থাকতে পারে, তাই পরিমিত খাওয়া উচিত।

 

উপসংহার

ইলিশ মাছ খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম। ইলিশ মাছ একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হলেও, এর কিছু সম্ভাব্য অপকারিতাও রয়েছে। সঠিক পরিচ্ছন্নতা ও পরিমিত পরিমাণে ইলিশ মাছ খাওয়া হলে এটি শরীরের জন্য খুবই উপকারি । নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং সুষম ডায়েট মেনে চললে ইলিশ মাছ খাওয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্য উপকারিতা লাভ করা সম্ভব।

Leave a Comment