Site icon HEALTH 24

করলার উপকারিতা ও অপকারিতা

করলার উপকারিতা ও অপকারিতা

করলার উপকারিতা ও অপকারিতা

করলার উপকারিতা ও অপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না।করলা (Bitter Gourd), যাকে বাংলায় বলে  কুমড়া গুটি।এতি খেতেও খুবই তিক্ত। করলা একটি তিক্ত স্বাদের সবজি।আমরা প্রায়ই আমাদের খাদ্যতালিকায় করলা রাকি। কারন এতে রয়েছে চমৎকার কিছু পুষ্টিগুন।

তবে, করলার উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অপকারিতাও রয়েছে। যা আমাদের অবশ্যই জানা উচিত। এই ব্লগ আর্টিকেলে আমরা করলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন শুরু করি-

করলার উপকারিতা ও অপকারিতা

করলা একটি ঔষধিগুন বিশিষ্ট সবজি।আমাদের নানা ধরনের শারিরীক সমস্যা দুর করে দেয় এই করলা। তাই দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রায়ই করলা খেয়ে থাকি। তবে করলার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। করলার উপকারিতার মধ্যে রয়েছে —

 

করলার উপকারিতা

করলা রক্তের শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে

করলার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হল এটি রক্তের শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। করলায় রয়েছে পলিপেপটাইড-P, গ্লুকোফিনিন, এবং অন্যান্য বায়োকেমিক্যাল যৌগ যা একদম ইনসুলিনের মতো কার্যকরী।

এই উপাদানগুলি শরীরের গ্লুকোজের স্তরকে কমাতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে,যারা নিয়মিত করলা খায় তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

 

করলার জুস এর উপকারিতা

করলার জুসের অনেক উপকারিতা রয়েছে।খালি পেটে করলার জুস খাওয়ার উপকারিতা অনেক।এটি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, কারণ এটি ইনসুলিনের মতই কাজ করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়া, করলা জীবাণুনাশক গুণে পরিপূর্ণ, যা শরীরে জীবাণু এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। হজম ক্ষমতা উন্নত করতে করলা কার্যকরী ভূমিকা রাখে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যার উপশমে সাহায্য করে।

করলার জুস ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং ব্রণ কমাতে বেশ কার্যকরী, কারণ এটি ত্বককে পরিষ্কার এবং উজ্জ্বল করে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হল এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে, কারণ এতে কম ক্যালোরি থাকে এবং ফাইবারের পরিমাণ বেশি। পাশাপাশি, করলা মেটাবলিজম বাড়িয়ে শরীরের সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। তবে, এর তিক্ত স্বাদের  কারণে কিছু মানুষ অস্বস্তি অনুভব করতে পারে, তাই প্রথমে অল্প পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত।

 

করলা মেটাবলিজমকে উন্নত করে

করলা শরীরের মেটাবলিজমকেমেটাবলিজমকে উন্নত করতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে ভিটামিন B-complex, আয়রন, এবং জিঙ্ক যা শরীরের শক্তি উৎপাদন ও সঠিকভাবে কাজ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । এটি মেটাবলিক রেটকে বাড়াতে সহায়তা করে, ফলে দেহের অতিরিক্ত মেদ কমে যায় এবং শরীরের ফিটনেস বজায় থাকে।

আরও পড়ুন > ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় 

করলা হজমে সহায়তা করে

করলার উপকারিতার মধ্যে একটি হলো হজমকে ভালো করে। কারন করলায় রয়েছে উচ্চ ফাইবার। এই ফাইবার পাচনতন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে । এটি অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখেএবং খাবারের পুষ্টি শোষণকে সহজ করে দেয়।

 

করলা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে

করলার উপকারিতার একটি হলো এতে আছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস যা ত্বকের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণ, দাগ এবং চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, যা ত্বকের নমনীয়তা ও ত্বকের গঠন বজায় রাখতে সাহায্য করে।

 

করলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

করলায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। এটি শরীরকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ এবং ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। যার ফলে শরীরকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত করলা খাওয়া উচিত।

 

করলা একটি কম ক্যালোরি সম্পন্ন সবজি, যা ওজন কমাতে সহায়তা করে। এটি রয়েছে ফাইবার যা পেটকে ভরা রাখে এবং অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখে। এর কম ক্যালোরি এবং উচ্চ ফাইবার উপাদান ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে আরে তরান্বিত করে।

 

করলা কিডনি ও লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখে

করলা কিডনি ও লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এর ডিটক্সিফাইং বৈশিষ্ট্য শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। এটি কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে এবং লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই কিডনি ও লিভার ভালো রাখতে করলা খাবেন।

 

তিতা করলার উপকারিতা

তিতা করলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এটি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া, করলা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে উজ্জ্বল ও পরিষ্কার রাখে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং অন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখে। এছাড়া, করলা মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।

আরও পড়ুন > ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবেনা

 

কাঁচা করলার উপকারিতা

এই গুণগুলির জন্য কাঁচা করলা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

করলা হার্টেকে ভালো রাখে

করলায় উপস্থিত পটাশিয়াম হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই  গুরুত্বপূর্ণ। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং হার্টের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। পটাশিয়াম হার্টের পেশির কার্যকারিতা উন্নত করে এবং রক্ত সঞ্চালন সঠিক রাখে।তাই যদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তারা ডাক্তারের পরামর্শে করলা খেতে পারেন।

করলার উপকারিতা ও অপকারিতার মধ্যে এতক্ষন আমরা করলার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলাম। এবার আমরা করলার অপকারিতা গুলো জেনে নিবো।

 

করলার অপকারিতা

করলার হাজারো উপকারিতার মধ্যে রয়েছে কিছু অপকারিতা। তাই যাদের শারিরীর সমস্যা আছে তারা অবশ্যই এর ক্ষতিকর দিকগুলো বিবচনায় নিয়ে তারপরে খাবেন। অপকারিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে যেমন-

কাঁচা করলার বিষে মৃত্যুও হতে পারে

করলা কাঁচা অবস্থায় বিষাক্ত হতে পারে, এবং এর অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরের জন্য ক্ষতিকর । বিশেষত কাঁচা করলা খেলে বিষাক্ত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কিছু ক্ষেত্রে, এটি মৃত্যুর কারণও হতে পারে। সঠিকভাবে রান্না করা না হলে করলা বিষাক্ত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই ভালোভাবে রান্না করে নিবেন।

 

করলা অতিরিক্ত খেলে পেটের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, যেমন পেটে ব্যথা, গ্যাস, বা ডায়রিয়া। এর তিক্ত স্বাদ পেটের জন্য কিছুটা অস্বস্তি তৈরি করতে পারে এবং হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়।

 

করলা রক্তের শর্করাকে কমিয়ে দেয়

করলা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে রক্তের শর্করা স্তর অতিরিক্ত কমে যায়। এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যারা ইনসুলিনইনসুলিন বা অন্যান্য ডায়াবেটিস এর ওষুধ গ্রহণ করছেন।

 

গর্ভাবস্থায় সতর্ক থাকতে হবে

গর্ভাবস্থায় করলা খাওয়ার বিষয়ে কিছু গবেষণা সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে। অতিরিক্ত করলা গর্ভাবস্থায় গর্বের বাচ্চার পুষ্টিতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভবতী মহিলাদের অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে করলা খাওয়া উচিত।

 

করলা হজমেও সমস্যা করতে পারে

 করলার তিক্ততা কিছু মানুষের জন্য হজম সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এটি পেটে অস্বস্তি, গ্যাস জমে যাওয়া, বা অন্যান্য হজমজনিত সমস্যার কারণ হতে পারে।

 

অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে

 কিছু মানুষের করলার প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে। এটি ত্বকের এলার্জি, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, বা অন্যান্য শারীরিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে করলা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।

 

ইনসুলিনের প্রভাব পরতে পারে

 করলার ইনসুলিনের প্রভাব শক্তিশালী এবং কিছু লোকের শরীরের ইনসুলিনের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে। এটি কখনো রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যারা ইনসুলিন ব্যবহার করেন।

 

করলায় রয়েছে অতিরিক্ত পটাশিয়াম

করলায় পটাশিয়ামের পরিমাণ খুব বেশি । কিছু লোকের জন্য এটি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যারা কিডনি সমস্যায় ভুগছেন বা কিডনি রোগের জন্য চিকিৎসা নিচ্ছেন।

আরও পড়ুন > কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

করলা খাওয়ার নিয়ম :

করলা রান্না করার আগে এটি ভালভাবে ধোয়া এবং কেটে নিতে হবে। তিক্ততা কমাতে, করলাকে কিছুক্ষণ লবন দিয়ে ম্যারিনেট করা যেতে পারে। এর পরে, এটি বিভিন্নবে খাওয়া যেতে পারে  যেমন করলা ভাজা, করলা তরকারি, করলা চাটনি ইত্যাদি।

 

করলার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে ৫টি সংক্ষিপ্ত FAQ নিচে দেওয়া হলো:

 

 ১. করলা কীভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে?

করলার মধ্যে থাকা উপাদান ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।

 ২. করলা কি ওজন কমাতে সহায়ক?

হ্যাঁ, করলার ফাইবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং ক্ষুধা কমায়।

 

 ৩. করলা খেলে কাদের সমস্যা হতে পারে?

অতিরিক্ত করলা খেলে গ্যাস্ট্রিক বা হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে।

 

 ৪. করলার পুষ্টিগুণ কী কী?

করলায় ভিটামিন সি, ফাইবার, পটাসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে।

 ৫. গর্ভবতী নারীদের জন্য করলা কি নিরাপদ?

প্রচুর পরিমাণে খাওয়া নিরাপদ নয়, কারণ এটি জরায়ুর সংকোচন ঘটাতে পারে।

 

 উপসংহার

করলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম। করলা, তার তিক্ত স্বাদ সত্ত্বেও, একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকার। এর মধ্যে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ, হজমের উন্নতি, ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত। তবে, এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে, যেমন বিষাক্ততা, পেটের সমস্যা, এবং বিশেষ পরিস্থিতিতে সতর্কতা প্রয়োজন।

 

সঠিকভাবে এবং পরিমাণে করলা খাওয়ার মাধ্যমে এর উপকারিতা লাভ করা সম্ভব, তবে অতিরিক্ত খাওয়া বা ভুলভাবে ব্যবহারের কারণে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। করলার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সচেতন থাকলে, এটি একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব।

Exit mobile version