Site icon HEALTH 24

কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায়

কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায়

কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায়

কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় রয়েছে। কোমর ব্যথা (লোয়ার ব্যাক পেইন) বর্তমান সময়ে একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরণের সমস্যার সৃষ্টি করে। কোমর ব্যথা শুধু বয়স্কদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এখন এই কোমর ব্যাথা তরুণ, প্রাপ্তবয়স্ক, এমনকি কিশোরদের মাঝেও দেখা যাচ্ছে!

ভুল জীবনযাত্রা, দীর্ঘসময় বসে থাকা, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, অতিরিক্ত ওজন, অথবা মানসিক চাপের কারণে কোমর ব্যথার সমস্যা দেখা দেয়। তবে সুসংবাদ হলো, কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় রয়েছে, যা নিয়মিত অভ্যাস করলে আপনি ব্যথামুক্ত জীবন উপভোগ করতে পারেন।

 

কোমর ব্যাথার কারন

কোমর ব্যথার কারণগুলো জানা থাকলে, তা প্রতিরোধ করা সহজ হয়। কোমর ব্যথার কিছু সাধারণ কারণগুলো হলো:

শারীরিক কিছু বদ অভ্যাস: সঠিকভাবে না বসা, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা, ভারী ওজন উত্তোলন বা শারীরিক পরিশ্রমে কোমরের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি।

অতিরিক্ত ওজন: অতিরিক্ত ওজন কোমরের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যা কোমর ব্যথার অন্যতম কারণ।

মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ: মানসিক চাপ পেশীগুলির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং এর ফলে কোমরের পেশীগুলি শক্ত হয়ে যেতে পারে।

জীবনযাত্রার ধরন: আধুনিক জীবনযাত্রার কারণে অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকেন, যা কোমরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বয়সজনিত কারণ: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের পেশী ও হাড় দুর্বল হতে থাকে, ফলে কোমরে ব্যথা হয়।

আঘাত: দুর্ঘটনা, পতন, বা কোনো আঘাতের ফলেও কোমর ব্যথা হতে পারে।

 

কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায়

নিম্নে কিছু সহজ এবং কার্যকরী উপায় উল্লেখ করা হলো যা কোমর ব্যথা কমাতে সহায্য করবে:

নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে

নিয়মিত ব্যায়াম শুধুমাত্র শরীরের জন্য ভালো নয়, এটি কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় হিসেবে কার্যকর। ব্যায়াম পেশীগুলির মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, পেশীগুলিকে মজবুত করে এবং পিঠের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। নিচে কিছু সহজ ব্যায়াম উল্লেখ করা হলো যা কোমর ব্যথা সারাতে সহায্য করে:

ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ: মেরুদণ্ডের স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে এবং কোমরের পেশীকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

পেলভিক টিল্টস: কোমরের পেশী শিথিল করে এবং পিঠের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়।

ব্রিজ এক্সারসাইজ: পেট ও কোমরের পেশীকে মজবুত করে।

চাইল্ড পোজ: এটি পিঠ ও কোমরের পেশীগুলিকে শিথিল করে এবং চাপ কমাতে সাহায্য করে।

প্ল্যাঙ্ক: পিঠ ও কোমরের পেশী শক্তিশালী করে এবং ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করে।

বি.দ্র: উপরের ব্যায়ামগুলোর নাম লিখে Youtube এ সার্স দিলে এ সম্পর্কে অসংখ্য টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন।

 

আরও পড়ুন > তিল খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

 

সঠিকভাবে বসতে ও শুতে হবে

সঠিক ভঙ্গিতে বসা এবং শোয়া কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম। অনেকেই ভুল ভঙ্গিতে বসে কাজ করেন, যা কোমরের পেশীতে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। নিচে সঠিকভাবে বসা এবং শোয়ার কিছু টিপস দেওয়া হলো:

বসার সময়: পিঠ সোজা রেখে বসবেন এবং আপনার পা মাটিতে সোজাভাবে রাখবেন। বসার সময় চেয়ারের পিছনে হেলান দিবেন যেন কোমরের ওপর চাপ না পড়ে।

শোয়ার সময়: শোয়ার জন্য যথাযথ মানের ম্যাট্রেস এবং বালিশ ব্যবহার করুন। পাশ ফিরে শোওয়া বা পিঠে ভর করে শোওয়া ভালো, কিন্তু উপর হয়ে বা পেটের ওপর ভর করে শোওয়া উচিত নয় কারণ এটি কোমরের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।

 

পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নিতে হবে

পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং ঘুম কোমর ব্যাথা সারানোর একটি সহজ উপায়। আপনি যদি পর্যাপ্ত আরাম না পান, তাহলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর । ঘুমানোর জন্য একটি উপযুক্ত মানের ম্যাট্রেস ব্যবহার করুন এবং যে পজিশনে ঘুমালে আপনার ভালো লাগে সেই পজিশনে ঘুমাবেন।

নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাবেন: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো এবং জাগা শরীরের জন্য ভালো।

 

হট এবং কোল্ড থেরাপি নিতে হবে

হট এবং কোল্ড থেরাপি কোমর ব্যাথা সারানোর একটি সহজ উপায়। তাপ প্রয়োগ করলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং পেশীগুলির মধ্যে মাংসপেশী শিথিল হয়। ঠাণ্ডা প্রয়োগ করলে ফোলা ও প্রদাহ কমাতে সহায্য করে।

হট ওয়াটার ব্যাগ: হট ওয়াটার ব্যাগে গরম পানি নিয়ে কোমরের পেশীতে ধরে রাখুন। এতে রক্ত চলাচল বাড়বে এবং পেশি শিথিল হবে।

বরফ : ঠাণ্ডা বরফ কোমরের যে স্থানে ব্যাথা সেখানে লাগালে  ফোলাভাব কমে যায়।

 

ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে

ওজন নিয়ন্ত্রণ কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায়ের একটি অপরিহার্য মাধ্যম। অতিরিক্ত ওজন আপনার কোমরের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েট অনুসরণ করুন এবং আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ: পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, এবং প্রোটিন গ্রহণ করুন যা আপনার হাড় ও পেশী শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে।

অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার: আদা, হলুদ, লেবু ইত্যাদি খাবার প্রদাহ বা ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে।

 

 মানসিক চাপ থেকে দুরে থাকবেন

মানসিক চাপ কোমর ব্যথার একটি প্রধান কারণ হতে পারে। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, এবং গভীর শ্বাস নেওয়ার অনুশীলন মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। মানসিক চাপ কমলে শরীরের পেশীগুলি শিথিল হয় এবং কোমর ব্যথা কমে যায়।

যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশন: এটি মনকে শান্ত করে এবং শরীরের পেশীগুলিকে শিথিল করে।

গভীর শ্বাস গ্রহণের অনুশীলন : এটি পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে।

 

কোমরে ম্যাসাজ করুন

ম্যাসাজ থেরাপি কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় হিসেবে কার্যকর। এটি পেশীগুলির রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং মাংসপেশীগুলিকে শিথিল করে। বিভিন্ন ধরণের ম্যাসাজ যেমন ডিপ টিস্যু ম্যাসাজ, সুইডিশ ম্যাসাজ, বা অ্যারোমাথেরাপি ম্যাসাজ ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

 

ফিজিওথেরাপিস্ট এর সহায়তা নিন

যদি কোমর ব্যাথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা কোনো উন্নতি না হয়, তাহলে একজন পেশাদার ফিজিওথেরাপিস্ট বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তারা ব্যথার প্রকৃতি এবং কারণ নির্ধারণ করে উপযুক্ত থেরাপি বা চিকিৎসা নির্ধারণ করতে পারেন।

 

ফিজিওথেরাপি এবং যোগব্যায়াম করুন

ফিজিওথেরাপি এবং যোগব্যায়াম কোমর ব্যাথা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। ফিজিওথেরাপিস্টদের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যায়াম করা এবং যোগব্যায়ামের নিয়মিত অভ্যাস পেশীগুলিকে মজবুত এবং শিথিল করতে সাহায্য করে।

 

আরও পড়ুন > করলার উপকারিতা ও অপকারিতা

 

 দৈনন্দিন জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে

আপনার দৈনন্দিন জীবনযাপনে কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন করাটাও কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় হতে পারে। যেমন:

 

প্রাকৃতিক উপায়ে কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায়

কিছু প্রাকৃতিক উপায়েও কোমর ব্যাথা সারানো সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ:

 

 উপসংহার

কোমর ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এটি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেক সহজ এবং কার্যকর উপায় রয়েছে। কোমর ব্যাথা সারানোর সহজ উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম।নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিকভাবে  বসা, পর্যাপ্ত ঘুম, হট এবং কোল্ড থেরাপি, ওজন নিয়ন্ত্রণ, মানসিক চাপ কমানো, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, ম্যাসাজ থেরাপি এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনে পরিবর্তন করতে পারলে কোমর ব্যথা সারানো সম্ভব।

 আপনি যদি কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে চান, তাহলে উপরের দেওয়া তথ্যগুলো অনুসরণ করুন এবং একটি সুস্থ জীবনযাপন করুন।

Exit mobile version