পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানলে অবাক হবেন!

পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে।তবে অপকারিতা যাই থাকুক না কেন পেয়ারার পুষ্টিগুন আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারি। পেয়ারা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু ফল যা সারা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত ।

এটি শুধু একটি সাধারণ ফল নয়, বরং একটি স্বাস্থ্যকর খাবার যা বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। পেয়ারা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হলেও এর কিছু অপকারিতাও রয়েছে। তাই, আজকে আমরা বিস্তারিতভাবে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করব।

 

Contents

পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

কমবেশি সবাই পেয়ারা খেতে বেশ পছন্দ করে। ছোট্ট এই ফলটি খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি এটি নানা ধরনের পুষ্টিগুনেও সমৃদ্ধ। এর উপকারিতা -অপকারিতা দুটোই রয়েছে। চলুন জেনে নেই-

 

পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা

পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ

পেয়ারা ভিটামিন সি, এ, ই, এবং কে-সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ভিটামিনে পরিপূর্ণ। এছাড়া এটি পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফোলেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজে সমৃদ্ধ।

নিয়মিত পেয়ারা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, চুল এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে এবং হাড় মজবুত হয়। একটি মাঝারি আকারের পেয়ারাতে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে যা দৈনিক প্রয়োজনীয়তার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ।

 

পেয়ারায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

পেয়ারায় প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষকে ফ্রি র‌্যাডিক্যালসের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি এবং লাইকোপিন যা দেহের কোষগুলিকে সুরক্ষিত রাখে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। গবেষণায় দেখা গেছে,নিয়মিত পেয়ারা খেলে প্রোস্টেট ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

 

পেয়ারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

পেয়ারায় ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা খাদ্য আঁশ ধীরে ধীরে হজম হয়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পায় না। এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি আদর্শ ফল। গবেষণায় দেখা গেছে, পেয়ারার পাতা বা ফল থেকে তৈরি চা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

 

পেয়ারা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে

পেয়ারার মধ্যে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ থাকে যা হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পেটের গ্যাস ও ফোলাভাব কমায়।

ফাইবার অন্ত্রের মল দ্রুত এবং সহজে সরিয়ে দেয়, যা সঠিকভাবে হজমের জন্য খুবই উপকারি। যারা পেটের সমস্যা যেমন ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (IBS) এ ভুগছেন, তাদের ডাক্তারের পরামর্শে পেয়ারা খাওয়া উচিত।

 

পেয়ারা ওজন ঠিক রাখে

পেয়ারা একটি কম ক্যালোরিযুক্ত ফল যা ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। এতে থাকা ফাইবার দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরিয়ে রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।

এছাড়াও, পেয়ারা শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়,যা দ্রুত ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে। তাই যারা ডায়েট করছেন তাদের জন্য পেয়ারা একটি আদর্শ ফল।

 

পেয়ারা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে

পেয়ারার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। ভিটামিন সি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, যা ত্বককে মসৃণ ও নমনীয় রাখে।

এটি ব্রণ ও অন্যান্য ত্বকের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, পেয়ারার অ্যান্টি-এজিং উপাদান বয়সের ছাপ কমায় যার ফলে তারুণ্য ফিরে আসে।

 

পেয়ারা চোখ ভালে রাখে

পেয়ারা ভিটামিন এ-এর একটি চমৎকার উৎস, যা চোখের জন্য খুবই উপকারী। এটি রাতকানারোগ প্রতিরোধ করে এবং চোখের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়।

নিয়মিত পেয়ারা খেলে চোখের রেটিনাররেটিনার স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ে। তাই যারা চোখের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য পেয়ারা একটি অত্যন্ত উপকারী ফল।

 

আরও পড়ুন > পাকা পেঁপের উপকারিতা

 

পেয়ারা খাওয়ার অপকারিতা

পেয়ারার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলাম। এবার আমরা পেয়ারা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই-

 

পেয়ারা বেশি খেলে পেটে সমস্যা হয়

যদিও পেয়ারা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে কিছু পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন- ডায়রিয়া বা পেট ব্যথা।

পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা অতিরিক্ত খাওয়া হলে হজমে সমস্যা করে। বিশেষ করে যাদের পেটে গ্যাস বা অ্যাসিডিটি সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

 

অ্যালার্জি হতে পারে

কিছু মানুষের পেয়ারা খেলে অ্যালার্জি হতে পারে।অতিরিক্ত পেয়ারা খেলে মুখের ভেতরে খসখসে অনুভূতি, ত্বকে ফুসকুড়ি বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে। যাদের পেয়ারা খেলে এসব লক্ষন দেখা দেয় তাদের পেয়ারা না খাওয়াটাই ভালো।

 

পেয়ারা শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয়

পেয়ারা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে যারা ইনসুলিন গ্রহণ করছেন বা যাদের রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকে, তাদের জন্য এটি বিপদজনক হতে পারে।

 

ওষুধের সাথে মিথষ্ক্রিয়া

পেয়ারা কিছু ওষুধের সাথে মিথষ্ক্রিয়া করতে পারে। যেমন- ব্লাড প্রেসার কমানোর ওষুধের সাথে পেয়ারা খাওয়া হলে রক্তচাপ অত্যধিক হ্রাস পেতে পারে। তাই যদি আপনি ব্লাড প্রেসার বা ডায়াবেটিসের ওষুধ গ্রহণ করেন, তবে পেয়ারা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

 

 কিডনিতে পাথর হতে পারে

পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট থাকে, যার ফলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। যারা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য পেয়ারা খাওয়া সীমিত রাখা উচিত। বিশেষ করে যারা কিডনির পাথরের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের পেয়ারা খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

 

আরও পড়ুন >   করলার উপকারিতা ও অপকারিতা

 

পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো। এগুলো দেখে আপনারা আপনাদের জানার বিষয়টি জেনে নিন।

 

খালি পেটে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা

খালি পেটে পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। এতে প্রচুর ফাইবার থাকায় হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। পেয়ারা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সেরগ্লাইসেমিক ইনডেক্সের কারণে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া, কম ক্যালোরিযুক্ত হওয়ায় ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক। তবে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের উপর ভিত্তি করে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা

গর্ভাবস্থায় পেয়ারা খাওয়া উপকারী, কারণ এতে ফোলেট থাকে যা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক এবং নিউরাল টিউব ডিফেক্টের ঝুঁকি কমায়। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, আর ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পেয়ারায় থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তবে, খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

পাকা পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা

পাকা পেয়ারা ভিটামিন সি, ফাইবার, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজমে সহায়তা করে, এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি চোখের ও ত্বকের জন্য উপকারী এবং কম ক্যালোরিযুক্ত হওয়ায় ওজন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।

 

কাঁচা পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা

কাঁচা পেয়ারা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এতে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। কাঁচা পেয়ারা ভিটামিন সি-এর ভালো উৎস, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ত্বককে উজ্জ্বল রাখে।

 

পেয়ারা খাওয়ার নিয়ম ও সঠিক সময়

পেয়ারা খাওয়ার সময় ১-২টি সীমিত পরিমাণে খাওয়া ভালো। খালি পেটে বা বিকেলের নাস্তার সময় খাওয়া যেতে পারে। পেয়ারার খোসা খাওয়া বেশি পুষ্টিকর এবং সতেজ, পাকা পেয়ারা বেছে নিতে হবে। খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া উচিত।

 

FAQ

পেয়ারাতে কত ক্যালোরি?

প্রতি ১০০ গ্রাম পেয়ারাতে প্রায় ৩৯-৪৩ ক্যালোরি থাকে। এটি একটি কম ক্যালোরিযুক্ত ফল যা স্বাস্থ্যকর খাবারের অংশ হিসেবে খুবই ভালো।

 

পেয়ারাতে কোন এসিড থাকে?

পেয়ারাতে প্রধানত সাইট্রিক এসিড,ম্যালিক এসিড এবং ট্যাননিক এসিড থাকে। এই এসিডগুলো পেয়ারার স্বাদে এবং পুষ্টিগুণে ভূমিকা রাখে।

 

পেয়ারাতে কি এ্যালার্জি আছে?

পেয়ারাতে সাধারণত কোনো গুরুতর অ্যালার্জি সমস্যা দেখা যায় না, কিন্তু কিছু মানুষের পেয়ারার প্রতি অ্যালার্জি হতে পারে। এ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ার মধ্যে চুলকানি, র্যাশ, বা পেটের সমস্যা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। যদি আপনি পেয়ারা খাওয়ার পর কোনো অস্বস্তি বা অ্যালার্জির লক্ষণ অনুভব করেন, তবে তা খাওয়া বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

আরও পড়ুন >কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

 

 উপসংহার

পেয়ারা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলাম। পেয়ারা একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল যা স্বাস্থ্যের অনেক উপকারে আসতে পারে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং ত্বক ও চোখের জন্য উপকারী। তবে, পেয়ারা খাওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে যদি আপনার কোনও বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে।

অতিরিক্ত খাওয়া বা অ্যালার্জি সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সব মিলিয়ে, পেয়ারা একটি প্রাকৃতিক উপহার যা সঠিকভাবে খেলে আপনার জীবনকে আরও স্বাস্থ্যকর ও আনন্দময় করতে পারে।

Leave a Comment