দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা কি জানেন?

দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করার আগে,আমাদের জানা দরকার কেন এটি এত বেশি জনপ্রিয়। বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে দুধ চা শুধু একটি পানীয় নয়, বরং এটি একটি সংস্কৃতির অংশ। সকাল শুরু করার আগে বা বিকেলের আড্ডায়, এক কাপ দুধ চা যেন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। দুধ চা শুধু স্বাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও উল্লেখযোগ্য।

দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা

দুধ চা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। দুধ চা খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি রয়েছে নানা ধরনের ঔষধিগুন। সকালের শুরুতে এক কাপ দুধ চা না খেলে যেন মনই ভরে না। ছোট-বড় সবাই দুধ চা খেতে পছন্দ করে। চলুন আজকে আমরা দুধ চা খাওয়ার উপকারিতাগুলো জানবো।

দুধ চা শরীরকে রাখে চাঙ্গা

দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা হল এটি শরীরকে চাঙ্গা রাখে এবং মানসিক উদ্যম বাড়ায়। এতে রয়েছে ক্যাফেইন যা মনোযোগ এবং উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে। সকালে কাজ শুরু করার আগে বা দিনের মধ্যভাগে ক্লান্তি দূর করতে দুধ চা একটি আদর্শ পানীয়। এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, মেজাজ ঠান্ডা রাখে এবং শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি কমায়।

 

দুধ চা হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে

দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা হিসাবে উল্লেখ করা যেতে পারে হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি। দুধে রয়েছো প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের গঠন এবং শক্ত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের হাড় শক্ত এবং বৃদ্ধদের হাড় ক্ষয় রোধ করার জন্য দুধ চা একটি আদর্শ খাবার হতে পারে । নিয়মিত দুধ চা পান করলে হাড়ের ক্ষয়জনিত সমস্যা যেমন অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমে যায়।তাই যাদের হাড়ের সমস্যা তারা দুধ চা খেতে পারেন।

 

দুধ চা বার্ধক্য প্রতিরোধ করে

বার্ধক্য প্রতিরোধেও দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা উল্লেখযোগ্য। চায়ের মধ্যে থাকা পলিফেনল এবং ফ্ল্যাভোনয়েড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা শরীরের কোষকে ফ্রি র‍্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ফ্রি র‍্যাডিকেল হলো এমন এক ধরনের ক্ষতিকর উপাদান যা বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। দুধ চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বার্ধক্যের লক্ষণগুলি দমন করে এবং ত্বককে সুস্থ ও সতেজ রাখে।

 

দুধ চা হজমে সহায়তা করে

হজমের সহায়তাকারী হিসেবে দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা অসাধারণ। চায়ের মধ্যে থাকা ট্যানিন হজম প্রক্রিয়াকে গতিশীল করে। ভারী খাবার খাওয়ার পর এক কাপ দুধ চা হজমের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি, দুধে থাকা ল্যাকটোজ হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্যকারী  এনজাইমগুলির কার্যকারিতা বাড়ায়, যা গ্যাস, বদহজম বা অন্যান্য হজমজনিত সমস্যা দুর করে ।

 

আরও পড়ুন > ডায়াবেটিস হলে কি কি  খাওয়া যাবেনা

 

দুধ চা মানসিক চাপ কমায়

দুধ চা খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মানসিক চাপ কমানোর ক্ষমতা। চায়ের মধ্যে থাকা থিওফিলাইন এবং দুধের প্রোটিন শরীরে সেরোটোনিন নামক হরমোনের নিঃসরণকে বৃদ্ধি করে। সেরোটোনিনসেরোটোনিন মস্তিষ্কের একটি রাসায়নিক উপাদান যা মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কমাতে সহায্য করে। তাই, মানসিক চাপ কমানোর জন্য এক কাপ দুধ চা খাওয়া অত্যন্ত উপকারী।

 

দুধ চা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

দুধ চা খাওয়ার উপকারিতাগুলোর মধ্যো অন্যতম একটি হলো  শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করা। দুধে থাকা বিভিন্ন ভিটামিন (যেমন ভিটামিন ডি, বি১২) এবং খনিজ (যেমন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম) শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। চায়ের মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপাদান যেমন ক্যাটেচিন এবং ফ্ল্যাভোনয়েড শরীরের অভ্যন্তরীণ শক্তি বাড়ায় এবং সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়।

 

দুধ চা হার্টেকে সুস্থ্য রাখে

হার্টকে সুস্থ্য রাখাও দুধ চা খাওয়ার আরেকটি উপকারিতা। চায়ের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে, এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

 

ওজন নিয়ন্ত্রণে দুধ চা

ওজন নিয়ন্ত্রণেও দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা দেখা যায়। দুধ চায়ে চিনি না মেশালে বা খুব কম চিনি ব্যবহার করলে এটি ওজন কমাতে সহায়তা করে। দুধের মধ্যে থাকা প্রোটিন এবং চায়ের ক্যাফেইন মেটাবোলিজম বাড়ায়, যা শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।

 

দুধ চা পুষ্টির ভালো উৎস

দুধের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, এবং ভিটামিন ডি থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতাকে সচল রাখে। চায়ের মধ্যে থাকা বিভিন্ন খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের বিভিন্ন কোষের কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং নানা রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

 

আদা দিয়ে দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা

আদা দিয়ে দুধ চা খাওয়ার কিছু উপকারিতা রয়েছে। এগুলো হলো:

  • সর্দি-কাশি কমায়: আদা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ব্যথানাশক উপাদানে সমৃদ্ধ। এটি সর্দি-কাশি এবং গলা ব্যথা কমাতে সহায্য করে।
  • হজমে সহায়তা: আদা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে। আদাযুক্ত চা পেটে গ্যাসের সমস্যা, বদহজম এবং খুদামন্দা  থেকে রেহাই দেয়।
  • ইমিউনিটি বাড়ায়: আদা এবং দুধে থাকা পুষ্টিগুণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস: আদায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীর থেকে ফ্রি র‌্যাডিকেল দূর করে এবং কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে।
  • প্রদাহ কমায়: আদা প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং গাঁটের ব্যথা এবং আর্থ্রাইটিসের মতো প্রদাহজনিত সমস্যা হ্রাস করতে সহায়ক।

 

আরও পড়ুন > করলার উপকারিতা ও অপকারিতা

 

চিনি ছাড়া দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা

চিনি ছাড়া দুধ চা খাওয়ার কয়েকটি উপকারিতা রয়েছে। এতে ক্যালোরি কম থাকে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায্য করে। চিনি না থাকায় রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। দুধ চায়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, এবং ক্যাফেইন মানসিক চাপ কমায় ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়। চিনি ছাড়া দুধ চা দাঁতের ক্ষতি ও গ্যাস্ট্রিকের ঝুঁকি কমায় এবং এটি হজমেও সহায়তা করে।

 

দুধ চা নিয়ে কিছু প্রশ্নোত্তর তুলে ধরা হলো :

দুধ চা খেলে কি ওজন বাড়ে

দুধ চা খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা আছে, তবে এটি নির্ভর করে চায়ে কতটুকু চিনি ব্যবহার করেছেন তার ওপর। দুধ চায়ে যদি বেশি চিনি বা ক্রিম ব্যবহার করা হয়, তবে এতে ক্যালোরির পরিমাণ বেড়ে যায়, যা ওজন বাড়াতে পারে। তবে, কম চিনি এবং লোফ্যাট দুধ ব্যবহার করলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

যদি আপনি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তাহলে চায়ে চিনি কম ব্যবহার করবেন।

 

দুধ চা খেলে কি হয়

দুধ চা খেলে শরীরে সতেজতা আসে, কারণ চায়ে রয়েছে ক্যাফেইন যা মানসিক শান্তি বাড়ায় এবং ক্লান্তি দূর করে। দুধে আছে ক্যালসিয়াম , যা হাড়ের জন্য উপকারী, আর চা ও দুধের সংমিশ্রণ দেহের শক্তি বাড়ায়। এটি মানসিকভাবে  প্রশান্তি দেয় এবং হজমেও সহায়তা করে , তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ঘুমের সমস্যা বা অম্লতা হতে পারে। তাই, দুধ চা পরিমিতভাবে পান করা উচিত।

 

দুধ চা খেলে কি গ্যাস্ট্রিক হয়

দুধ চা খেলে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনার চায়ে চিনি বা ক্যাফেইনের পরিমাণ বেশি থাকে। চায়ের ক্যাফেইন পাকস্থলীতে অ্যাসিড উৎপাদন করে, যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করে। এছাড়া, অনেকের দুধ হজমে সমস্যা হয়। তাই, যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য দুধ চা পরিমিত পরিমাণে বা এড়িয়ে চলাই উত্তম।

 

গর্ভাবস্থায় দুধ চা খেলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় দুধ চা পরিমিত খেতে হবে , কারণ  এতো রয়েছে ক্যাফেইন।এই অতিরিক্ত ক্যাফেইন গর্ভের সন্তানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং গর্ভপাতের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়। তাই, চা কম পরিমাণে পান করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

প্রতিদিন দুধ চা খেলে কি হয়

প্রতিদিন দুধ চা খেলে শরীরে কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। কারন অতিরিক্ত চা পান করলে ক্যাফেইনের কারণে ঘুমের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, এবং গ্যাস্ট্রিক হতে পারে। এছাড়া, দুধ চায়ে বেশি চিনি থাকলে ওজন বৃদ্ধি এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই, পরিমিত পরিমাণে দুধ চা পান করা উচিত।

 

আরও পড়ুন > কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা 

 

উপসংহার

দুধ চা খাওয়ার উপকারিতা অনেক এবং এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি পানীয়। এটি শরীরকে চাঙ্গা রাখে, হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে বার্ধক্য প্রতিরোধ করে, হজম ভালো করে, স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হার্টের সুস্থতা বজায় রাখে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং সামগ্রিক পুষ্টি সরবরাহ করে। সুতরাং, প্রতিদিন এক কাপ দুধ চা খেতে পারেন।

Leave a Comment