পিরিয়ড না হওয়ার কারণ না জানলে বিপদ!

মাসিক পিরিয়ড নারীদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা প্রতিমাসে স্বাভাবিকভাবে ঘটে। কিন্তু কখনো কখনো এই পিরিয়ডের ব্যাঘাত ঘটে, এবং পিরিয়ড না হওয়ার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হতে পারে। পিরিয়ড না হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। এই ব্লগে আমরা পিরিয়ড না হওয়ার কারনগুলো সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।

 

পিরিয়ড না হওয়ার কারণ

 

গর্ভাধারন

গর্ভাধারন হল পিরিয়ড না হওয়ার অন্যতম সাধারণ কারণ। গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে মাসিক পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যদি আপনার পিরিয়ড নিয়মিত না হয় এবং আপনার কোনো সেক্সুয়াল এক্টিভিটি থাকে, তবে প্রেগনেন্সি পরীক্ষা করা উচিত। গর্ভধারন নিশ্চিত করতে গর্ভধারণ পরীক্ষা বা আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা যেতে পারে। যদি পরীক্ষা পজিটিভ আসে, তবে দ্রুত গাইনোকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

 

স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ

মানসিক চাপ এবং স্ট্রেস পিরিয়ড অনিয়মিত করে দিতে পারে। যখন আপনি অত্যাধিক মানসিক চাপের সম্মুখীন হন, আপনার শরীরের হরমোনাল সিস্টেমে পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনগুলি মাসিক পিরিয়ডে অস্বাভাবিকতা তৈরি করতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস হরমোন অ্যাড্রেনালাইন এবং কর্টিসলের স্তর বৃদ্ধি করতে পারে, যা পিরিয়ডে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

 

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS)

PCOS একটি সাধারণ হরমোনাল ডিসঅর্ডার যা অনেক নারীর পিরিয়ড অনিয়মিত করে। এই অবস্থায়, ওভারিতে ছোট ছোট সিস্ট গঠন হয় যা হরমোন ভারসাম্যকে নষ্ট করে । PCOS সাধারণত হরমোনের স্তর পরিবর্তন ঘটায়, যার ফলে মাসিক পিরিয়ড নিয়মিত হয়না।

 

ওজনের পরিবর্তন

অতিরিক্ত ওজন বা অত্যাধিক ওজন কমালেও পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত ওজনের কারণে শরীরে অতিরিক্ত ইস্ট্রোজেন তৈরি হয়, যা পিরিয়ডের অসংগতি ঘটাতে পারে। অন্যদিকে, অত্যাধিক ওজন কমানোর কারনেও পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে।

 

থাইরয়েড সমস্যা

থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের হরমোন উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থাইরয়েড সমস্যাগুলি, যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা কমে যাওয়া) বা হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত কার্যকারিতা), পিরিয়ডকে অনিয়মিত করে তোলে। থাইরয়েড সমস্যা থাকলে মাসিক পিরিয়ডে অসামঞ্জস্য দেখা দেয় এবং এটি চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে।

 

 প্রিমেনোপজ

প্রিমেনোপজ হল এমন একটি সময়কাল যা সাধারণত ৪৫-৫০ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। এই সময় শরীর হরমোনাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় এবং পিরিয়ডের অনিয়ম শুরু হয়ে যায়। প্রিমেনোপজের সময় হরমোন থেরাপি বা জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে উপসর্গগুলি কমানো যেতে পারে।

 

 ঔষধের প্রভাব

কিছু ঔষধ যেমন গর্ভনিরোধক পিল, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস বা অন্যান্য হরমোনাল থেরাপি এর জন্যও পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই ঔষধগুলি শরীরে হরমোনের ভারসাম্য পরিবর্তন করে, যার ফলে মাসিক পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে যায়। যদি ঔষধের কারণে পিরিয়ডে সমস্যা ঘটে, তবে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে বিকল্প চিকিৎসা বা ঔষধ পরিবর্তন করা উচিত।

 

অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা

কিছু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, বা অন্যান্য গর্ভাশয়ের অসুখ পিরিয়ডের অনিয়মের কারণ হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে সঠিক চিকিৎসা এবং নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। যে কোনো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা দ্রুত শনাক্ত করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

 

উপসংহার

যদি আপনার পিরিয়ড নিয়মিত না আসে বা বন্ধ হয়ে যায়।  তবে এটি সঠিকভাবে চিহ্নিত করা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, একটি গাইনোকোলজিস্ট বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন। চিকিৎসক আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক কারণ নির্ধারণ করতে সক্ষম হবেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করবেন।

 

পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিলে পিরিয়ডের সমস্যা দুর হবে। তবে যদি সমস্যাটি দীর্ঘমেয়াদী হয় বা অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

আশা করি আপনার পিরিয়ড না হওয়ার কারণগুলো বুঝতে পেরেছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবেন।

Leave a Comment